নওগাঁ প্রতিনিধি:
স্বেচ্ছাচারিতা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে গেল পাঁচ বছরে বিদ্যালয়ের কয়েক লক্ষ টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে ধামইরহাট উপজেলার খেলনা ইউনিয়নের বেড়ীতলা একাডেমীর প্রধান শিক্ষক জিন্নাতুন পারভীনের বিরুদ্ধে।
মোট দশটি দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার মাধ্যমে একছত্র আধিপত্য বিস্তারে শিক্ষকদের মাঝে বিভাজন গড়ে তৈরি করেছেন নিজস্ব সিন্ডিকেট। বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এক রাজতন্ত্র কায়েম করেছেন তিনি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম নীতি তোয়াক্কাও না করে বিভিন্ন ফিস বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে আসছেন তিনি।
এতে ভেঙে পড়েছে বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা। এমন সব অভিযোগ তুলে, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, এলাকার অভিভাবক, প্রক্তন শিক্ষার্থী ও সুধী সমাজ বৃন্দ সকলের স্বাক্ষরীত পৃষ্ঠা সমূহ সংযুক্ত করে, ঢাকা মহা পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, নওগাঁ জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারে বরাবরে অভিযোগ দিয়েছেন অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রী মহল। সোমবার (০৯সেপ্টেম্বর ) এসব বিষয়ে তদন্ত করতে স্কুলে আসছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত টিম।
অনিয়মের এসব বিষয় প্রকাশ পেয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধান শিক্ষক জিন্নাতুন পারভীনকে অপসারণ দাবি করেছেন শিক্ষার্থী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সুধীসমাজ ও অভিভাবক মহল।
তদন্ত করার পরের দিন ১০/০৯/২০২৪ মঙ্গলবার কৌশলি চতুর বাজ ওই প্রধান শিক্ষিকা জিন্নাতুন পারভীন প্রতিষ্ঠানের চুরি করা পানির পাম্প নিয়ে স্কুলের গেটে আসলে শিক্ষার্থীরা নিষেধ করেন এবং তাঁকে চলে যেতে বললেও, পাম্প রেখে প্রধান শিক্ষক জিন্নাতুন পারভীন অনিয়ম দূর্নীতিকে আড়াল করতেই তার শিক্ষার্থীর কমন রুমে চলে যান এবং একটি নাটকীয় অভিনয়ের মাধ্যমে কমন রুমে একা একা অবস্থান করেন। পরে সেনাবাহীনি ও পুলিশ এসে তাঁকে নিয়ে যান।
জানা গেছে, চলতি বছরের ২৬ আগস্টে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, এলাকার অভিভাবক, প্রক্তন শিক্ষার্থী ও সুধী সমাজ যৌথ হয়ে ঢাকা মহা পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, রাজশাহী, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক,বরাবরে বেড়ীতলা একাডেমি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জিন্নাতুন পারভীনের অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ-আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের বিষয়গুলো তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে জেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশনা দেন শিক্ষাবোর্ড।
অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া ধামইরহাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন
বলেন, হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বুধবার (০৯ সেটেম্বর) অভিযোগকারীরা এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।বাকিটা তদন্তের পর বলা যাবে।
অভিযোগকারীরা জানান, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নানা অনিয়মে অর্থ আত্মসাত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল নিয়মনীতি না মেনে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেছেন প্রধান শিক্ষক জিন্নাতুন পারভীন । তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয় ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষার স্বার্থে আমরা অভিযোগ করেছি।
তথ্য মতে, বিদ্যালয়ে ২ ‘শ ৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এ হিসেবে ভর্তি ফরম, ভর্তি ফি, মাসিক বেতন, টার্ম পরিক্ষা ফি, মডেল টেস্ট, প্রশংসাপত্র ফি- মিলে প্রতিবছর শুধু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিদ্যালয়ে লাখ লাখ টাকার উপরে আয় হয়।
এবং আরও সার্টিফিকেট বাণিজ্য প্রায় ৪ লাখ টাকা, বিদ্যালয়ের নিজস্ব ফসলি জমি থেকে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা ,২০২৩ সালে উপজেলা থেকে টিআর কর্তৃক বরাদ্দ ৪৮ হাজার টাকা ও বিদ্যালয়ের সম্পদ ব্যাক্তিগত ব্যবহার করা যার মূল্য কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা অথচ ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের কোন হিসাব নেই। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোট আয় হয়েছে
বিদ্যালয়ের বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথায় গেল সেই প্রশ্ন এখন অভিভাবক মহলের। প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ২০২৪ সালে ২৬ আগস্ট ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা’ বোর্ড চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে অবহিত করেন জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি)।
শুধু অর্থ আত্মসাৎ নয়, নিজের অপরাধ আড়াল করতে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের পরেও পকেট কমেটি করেছেন ওই প্রধান।বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোস্তাফিজুর বলেন, প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম এবং শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ করায় তিনি আমাদের বিরুদ্ধে লেগেছেন।
আমি শরীর চর্চার শিক্ষক হওয়ার পরও আমাকে জোর করে বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয়ে পড়াতে বাধ্য করেন। আর ধর্ম শিক্ষক দিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। ইংরেজী শিক্ষক রশিদুজ্জামান এর নিকট হতে চিকিৎসার ছুটি দিতে ৭০০০ টাকা গ্রহন করেন এতে কোয়ালিটি শিক্ষা পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক।
প্রধান শিক্ষক জিন্নাতুন পারভীনকে দূর্নীতি অনিয়মের কথা জানতে চাইলে তিনি সঠিক উত্তর না দিয়ে তালবাহানা শুরু করেন ।
টাকার স্থিতির বিষয় বলা হলে তিনি বলেন-বিদ্যালয়ের হিসাব নিকাসের জন্য সকল বহি বাড়ীতে আছে এবং ৩ বছর আগে বিদ্যালয় হতে নিয়ে যাওয়া পানির পাম্পসহ আরো অন্যান্য কথা জিজ্ঞেস করলে বলেন আমি মিস্ত্রীকে দিয়েছি এমন মিথ্যে কথা বলে নিজের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করেন৷ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে অপরাপর বিষয়গুলো তার কাছে জানতে চাইলে এর সর্বশেষ তদন্ত টিমকে জানাবো এমন সব কথা বলে এড়িয়ে যান।
Leave a Reply